সমস্ত লেখাগুলি

পশুবলি ও অ্যানিমেল প্রটেকশান ল -
অভিষেক দে।
Nov. 19, 2024 | আইন | views:287 | likes:0 | share: 0 | comments:0

"জীবে প্রেম করে যে জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর " - এটা কী শুধুই একটা বাণী না পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে শুধু পড়তে হয়? আমরা কালি পূজা,দূর্গা পূজা ও মনসা পূজা উপলক্ষে হাজার হাজার পাঠা, মোষ, হাস বলি দি প্রতি বছর। কুরবানীর ঈদে গরু,মোষ,দুম্বা,উট কুরবান দি নির্বিকার চিত্তে। শিশু বৃদ্ধ সবার চোখের সামনে ধারালো অস্ত্রের কোপে ধড় থেকে নিরিহ, অবলা প্রানীদের মাথাটাকে বিচ্ছিন্ন করা হয় সেটা নৃসংশতা ছাড়া আর কিছুই নয়।


শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ থেকে প্রানী হত্যা যা খুশি করা যায়।কেউ প্রতিবাদ তো করবেই না উলটে এই কাজ পূন্যের মনে করেন অনেকেই।আর কেউ যদি বাধা দেয় তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে উম্মত্ত একদল অমানুষ এর দ্বারা। যে দেশে মানুষই হৃদয়বিদারক অবস্থায় বসবাস করছে, সে দেশের প্রাণিদের দুর্দশার কথা চিন্তা করা কঠিন।


কিন্তু আমরা কিছু সময়ের জন্য আপনাদের এটাই বিবেচনা করার অনুরোধ করছি যে, উৎসর্গ হবার জন্য যে সমস্ত উট, ভেড়া, ছাগল,গরু রা অবলা প্রানী বলেই কি ইচ্ছা মত যা খুশি করা যায় তাদের সাথে??


ধর্মের ধ্বজাধারীরা প্রচার করে থাকেন, ধর্মীয় কারনে পশুবলি দিলে মানসিক শক্তির বিকাশ হয়। তারা যুক্তি রূপে টেনে আনেন তন্ত্রের বা কুরবানির কথা। অথচ পুজোর বা কুরবানির নামে এই নৃশংস প্রথা কোনো ভাবেই মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করেনা বরং দুর্বল এবং অবলা প্রানীদের যে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় এতে খুনী মানসিকতার জন্ম নেয়। বিশেষত শিশুমনে বলিপ্রথার কু প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ থেকে মানসিক রোগ, ভীতি, হিংস্রতা বৃদ্ধি, নিদ্রাহীনতা হতে পারে। সারা পৃ্থিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের এমনটাই অভিমত।


ধর্মীয় কারনে পশুবলির বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আইন কি বলছে?

১) The prevention of cruelty to animals act, 1960 অনুসারে, প্রকাশ্যে পশুবলি নিষিদ্ধ। কোন প্রত্যক্ষদর্শী ওই বলির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানালে মন্দিরের পূরোহিত সমেত পুজো কমিটির কর্মকর্তা ও বলি দানে অংশগ্রহনকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে।

২) Wild life protection act অনুসারে যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী প্রানী হত্যা দন্ডণীয় অপরাধ। জেল এবং জরিমানা দুটোই হতে পারে।

৩) Public nuisance act অনুসারে কোনো ব্যক্তির চোখের সামনে বলি দেওয়া নিষিদ্ধ।

৪) Arms Act অনুসারে লাইসেন্স ছাড়া বলি দেওয়ার অস্ত্র যেমন, খাঁড়া, চপার, কাটারি ইত্যাদি জিনিস, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মজুদ রাখা বেআইনি  এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ।

৫) Cow Protection Act অনুসারে ধর্মের নামে পশুহত্যা নিষিদ্ধ হয়েছে। হাইকোর্টের নিষিদ্ধকরণের সাথে সুপ্রিম কোর্টও এই রায়ে অভিমত দেয়, বকরি ইদের সময় গরু কুরবানি দেওয়া মুসলিম ধর্মে প্রয়োজনীয় নয় এবং কুরবানি আইনত নিষিদ্ধ। এটিকে জনস্বার্থে নিষিদ্ধ করা উচিত। (মহম্মদ হানিফ কুরেশি বনাম বিহার সরকার, এ.আই.আর ১৯৮৫, এস.সি ৭৩১)

এছাড়াও পশু প্লেস নিবারণী আইন, দৃশ্য দূষণ আইন ইত্যাদি সবগুলি প্রযোয্য।


প্রসঙ্গত জানাই, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি এবং ভারতের মানবতাবাদী সমিতি, বহুদিন ধরেই ধর্মের নামে প্রকাশ্যে এই পশুহত্যার বিরোধিতা করে আসছে। ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিকাশ শ্রীধর শিরপুরকরের ডিভিশন বেঞ্চ যে শুধু রায় দিয়েছে,  কালীঘাট মন্দিরে প্রকাশ্যে বলি দেওয়া যাবে না। প্রকাশ্যে বলি দেওয়া বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বর্ধমানের জেলা শাসক সৌমিত্র মোহন মহাশয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পশুবলি বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ায় সেটি বন্ধ করা গেছে। সম্প্রতি, ধর্মের নামে নির্বিচারে পশুবলি রুখতে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির জনস্বার্থ মামলা আদালতে গৃহীত হয়েছে।

সূত্র- https://kolkata24x7.com/to-stop-thousands-of-animals-kill-in-the-name-of-sacrifice-in-several-mandir-in-purulia-pil-filed-calcutta-high-court.html

https://kolkata24x7.com/to-stop-thousands-of-animals-kill-in-the-name-of-sacrifice-in-several-mandir-in-purulia-pil-filed-calcutta-high-court.html


ভাবলে অবাক হতে হয়, পশুবলির বিরুদ্ধে এতগুলি জোরালো আইন থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে দুর্গা, কালি, মনসাপুজো, ইদের কুরবানীর সময় কত কত পাঁঠা, ভেড়া, গরু, উঁট নির্বিচারে বলি দেওয়া হচ্ছে। আর দেশের নির্লজ্জ সরকার এবং প্রশাসন ধর্মের দোহায় দিয়ে এইসব বে-আইনী প্রথাকে পশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় আইন ব্যবস্থাকে কদর্য রূপে প্রকাশ করছে। বিক্ষিপ্ত কিছু জায়গা বাদে (যেমন হিমাচল প্রদেশ, ঝারখণ্ড ইত্যাদি) সব জায়গাতেই প্রশাসন সূত্রে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।


কবিগুরুও তো বলিপ্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। ‘বিসর্জন’ ও ‘রাজর্ষি’ নামক দুটি উপন্যাস ও নাটকের মাধ্যমে একশো বছর আগে ‘বলি’র বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শুধুমাত্র ২৫ বৈশাখ আর ২২ শ্রাবনে গদগদ ভঙ্গিতে কবিতা পাঠেই তাঁকে সম্মান জানানোতে শেষ হয়ে যায়? তাঁর চিন্তা ধারাকে সম্মান জানাতে আমরা এটুকু করতে পারিনা? আমরা কী মানবিক হতে পারি না?

যাই হোক একটা কবিগানের কয়েকটা লাইন মনে পড়ছে, একজন ফকিরী সাধক বলছিলেন-


''কুরবানি করিতে হুকুম প্রাণপ্রিয় ধন,

গরু-ছাগল হইল কি তোর এতোই প্রিয়জন?

নিজের থেইক্যা প্রিয় বস্তু আর যে কিছু নাই,

আত্মত্যাগই আসল কুরবান জেনে নিও ভাই।

দশ ইন্দ্রিয়, ছয়টি রিপু পারলে দমন কর গো,

প্রেম রাখিও অন্তরের ভিতর.....''


সংযোজন: "কুরবানির ঈদ"। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এই দিনটির গুরুত্বই আলাদা। তারা তাঁদের আল্লাহতালার উদ্যেশ্যে কুরবানি দেয় অবলা প্রানী দের। উঠ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি কুরবানির তালিকায়। যে কোনো যুক্তিবাদী মানুষই ধর্মের নামে প্রানী হত্যার বিপক্ষে। অনেকেই উদ্ভট দাবী করে খাদ্যর সাথে পশুবলি কে এক করে দেন। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে, খাদ্যর প্রয়োজনে একটা দুটো প্রানী কে হত্য করা এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে নির্বিচারে অবলা প্রানী দের হত্যা এক বিষয় নয়। ব্যাপার টা এভাবে ভাবুন যে, স্নানের জন্য বাথরুমে উলঙ্গ হওয়া এবং প্রকাশ্যে উলঙ্গ হয়ে স্নান করার ভেতর যথেষ্ট পার্থক্য আছে।

সরকার চাইলেই ধর্মের নামে প্রানী হত্যা কে বন্ধ করতেই পারে কঠোর ভাবে। কিন্তু মাজা ভাঙ্গা খাঁজা সরকার এই উদ্যোগ নিতে চায়না অসংখ্য কুযুক্তি দেখিয়ে। আসলে ভোট ব্যাঙ্ক বড় বালাই। তাই ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে সরকার আন্তরিক হয়না এই জঘন্য প্রথা কে বন্ধ করতে।

প্রানীরা অবলা তাই ধর্মের নামে যা খুশী তাই করা যায় তাদের সাথে। আর প্রতিবাদ করার মতন বুকেরপাটা ক'জনের থাকে মশাই।


নীরিশ্বরবাদ দর্শন " চার্বাক" এ একটা অসম্ভব সত্যি কথা বলা হয়েছে যে- ভণ্ডরা চায় খেতে পশুর, মাংস তাই তারা দিয়েছে বলির বিধান।

জলই জীবন? -
অভিষেক দে।
Nov. 18, 2024 | পরিবেশ | views:885 | likes:0 | share: 0 | comments:0

সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে এসেছি জলের অপর নাম জীবন। কিন্ত আমরা এই জল নিয়েই এমন অনেক কিছু জানিনা যেগুলো আমাদের জেনে রাখা উচিৎ। 

আমাদের শরীর কে নিরোগ সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাদ্যের সাথেই পরিস্রুত পানীয়জল এর প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরী। এই পরিস্রুত পানীয়জল নিয়েই সামান্য আলোচনা করবো। 

প্রথমেই আমাদের জেনে রাখা ভালো এই "পরিস্রুত পানীয়জল" এর নামে বাজারে যেসব বোতল ভর্তি মিনারেল ওয়াটার বিক্রি করা হয় সেখানেই রয়েছে গপ্পো। কারন, এটি প্রায় ক্ষেত্রেই বিশুদ্ধ প্রতারণা। একমাত্র ঝরনার জল বা স্প্রিং ওয়াটার, যাতে নানান প্রাকৃতিক খনিজ লবন মিশে থাকে তাকেই বলে "মিনারেল ওয়াটার"। বিদেশে এই মিনারেল ওয়াটার বোতলে কোন পাহাড়ের কোন ঝরনার জল থেকে সংগৃহিত সেটা লেখা থাকে। কিন্ত দুর্নীতিতে প্রথম সারিতে থাকা আমাদের দেশ ভারতে এসব আশা করাই বৃথা। তাছাড়া বাজারজাত ১০/২০/৩০ টাকার পানীয়জল এর বোতলের জল কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়, সেটা আমরা কতজন জানি? কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেখানে দেখেছিলাম, জনৈক ব্যাক্তি ২০ লিটারের জার এ সাধারণ কলের জল ছাঁকনির মধ্যে ছেঁকে ভর্তি করে বিক্রি করছিল আর সাধারণ কলের জলে যে কত প্রকার ব্যাকটেরিয়া আছে সেসব খোঁজ কতজন রাখেন। দুঃখ এটাই এইসব প্রতারণা দিনের পর দিন চলে আসছে কিন্তু প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে এবং টাকার কুমির বনে বসে থাকা লোভী দের আন্ডারটেবিল ঘুষ দেওয়ার কারনে অনেক কিছুই ধামাচাপা পরে যায়। 

তথ্য বলছে গোটা পৃথিবীর মতন মানব শরীরও ৭০ ভাগ অংশ জল দ্বারা পূর্ণ এবং শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কোষ এই জলের ওপরে নির্ভরশীল। শরীর থেকে দূষিত Toxin ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ বের করতে জলের গুরুত্ব অনেক। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে আজ প্রায় প্রতিটি পরিবারে নানান রোগ যার সংখ্যাগরিষ্ঠই কিন্ত জলবাহিত রোগ। জলের গুণ মাপা হয় প্রধানত তিন ভাবে। ১) Cluster Size, ২) pH Value, ৩) ORP Value। বর্তমানে এই দ্রুতগতির জীবনে আমাদের শরীরে এতোটাই Acid Base জমা হয়ে গেছে যে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ সঠিক অক্সিজেন ও পুষ্টি পাচ্ছে না।  পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি শিশু যখন জন্মায় তখন থেকে শিশুটি যতদিন মায়ের দুধ পান করে ততদিন তার শরীরের pH থাকে 7.4 ( Neutral)। তারপর থকেই শুরু হয় নানান সমস্যা। ‌"No Disease Can Survive in An Alkaline Body" এই তথ্য দেওয়ার জন্য " Dr. Otto Heinrich Warburg " কে ১৯৩১ সালে " Nobel " পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।

যদি আপনি শিয়ালদহ কিংবা হাওড়া স্টেশনের ভেতরের কলে জল পান করেছেন তাহলে নিশ্চই জানেন ঐ জলে একটা ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে যা আসলে পানীয়জল পারিস্কার করার জন্য ব্যবহৃত ক্লোরিন। ক্লোরিন যুক্ত পানীয়জল দীর্ঘসময় ধরে পান করাও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এক লিটার পানীয়জলে আধ মিলিগ্রাম ক্লোরিন মিশিয়ে কমপক্ষে এক ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপরেই সেটা পানযোগ্য হয়। জলের সাথে ক্লোরিন বিক্রিয়া করে হাইপোক্লোরাইট অ্যাসিড ও হাইপোক্রোরাইট তৈরি করে। এই হাইপোক্লোরাইটই হল জীবাণুনাশক। বাজারে যে জিওলিন পাওয়া যায় তাতে থাকে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট। এক গ্লাস বা ২০০ মিলি.জলে ৩-৪ ফোঁটা জিওলিন মেশালেই চলে। ক্লোরিন কিন্ত সব ধরনের জলবাহিত জীবাণু কে ধ্বংস করতে পারে না এবং এটি দীর্ঘসময় ধরে শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

প্রচন্ড গরমে রঙ্গিন ঠান্ডা পানীয়তে চুমুক দিয়ে গলা ভেজাতে কে না চায় কিন্ত এই ঠান্ডা পানীয়ই কিন্ত বিপদ বাড়ায় অনেক। সাল ২০০৩ এ C.S.E. সংস্থা ল্যাবোরেটারি তে বেশ কয়েকটি রঙ্গিন পানীয়র পরীক্ষা করে জানিয়েছিল এতে উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত কীটনাশক ( Pesticides, Insecticides) রয়েছে যা শরীরে বড় ধরনের রোগ সৃষ্টি করার পক্ষে যথেষ্ট। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ক্লোপাইরিপস্, হেপ্টাক্লোর, লিনডেন ইত্যাদি।

এই রিপোর্ট সামনে আসার পরেও যে অবস্থার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি তার প্রমাণ ২০০৬ সালে ফের C.S.E. সারা দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি নামী কোল্ড ড্রিংক বা সফট ড্রিংক এর স্যাম্পেল নিয়ে পরীক্ষা করে জানায় এসবে কত পরিমাণে বিষাক্ত জিনিস রয়েছে।

জল যদি আপনি ফুটিয়ে খেতে পারেন সেটা সবচেয়ে ভালো। কমপক্ষে ২০ মিনিট জল ফুটিয়ে সেটা ভালোকরে ছেঁকে তারপর ঠান্ডা করে পান করুন। এড়িয়ে চলুন ফ্রিজ রাখা পানীয়জল বের করেই পান করা এবং বরফ শীতল জল একেবারেই পান করবেন না। চেষ্টা করুন পানীয়জল এর অপচয় বন্ধ করার। মনে রাখবেন এই পৃথিবীতেই এমন অনেক স্থান আছে যেখানে মানুষেরা সামান্য জলের জন্য হাহাকার করেন।

একুশ শতকের লজ্জা ডাইনি -
অভিষেক দে।
Nov. 18, 2024 | কুসংস্কার | views:889 | likes:25 | share: 0 | comments:0

গত ৫ জুলাই ২০২১ ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ এ ডাইনি সন্দেহে একজন মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ এবং অপরাধীদের কড়া শাস্তির দাবী জানিয়ে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নবীন পট্টনায়ক কে ইমেল করেছি। খবর পেয়েছি সরকার এখনও নাকি কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। এই সূত্র ধরেই

কথা হচ্ছিল ফ্রিথিংকার এবং সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট মিঃ দিবজ্যোতি সাঁইকিয়ার (Activist Dr Dibyajyoti Saikia) সাথে। 

গত ১৪ আগষ্ট ২০১৫ সালে অসম বিধানসভায় পাশ হয়েছে ডাইনি হত্যা প্রতিরোধ আইন। " THE ASSAM WITCH HUNTING ( PROHIBITION, PREVENTION AND  PROTECTION) ACT 2015 " অসম বিধানসভায় আলোচনার পর বিলটি গৃহীত হয় এবং ২৯ জুন ২০১৮ সালে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়। উক্ত আইনে কোনো মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দিলে অভিযুক্তকে ৩ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে। ডাইনি অপবাদে কাউকে অত্যাচার করা হলে ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও এক থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ডাইনি বলে অপবাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে জনতা জড়িত থাকলে সকলের কাছ থেকে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের বিধান থাকছে। ডাইনি অপবাদে খুন করার অভিযোগে ৩০২ ধারায় বিচার হবে। ডাইনি হিসেবে চিহ্নিত করায় কেউ আত্মহত্যা করলে প্ররোচনার দায়ে ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজা ও এক থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে। তদন্তে গাফিলতি হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ হবে ১০ হাজার টাকা। সরকারের দাবি, অসমের এই আইন বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের চেয়েও কড়া হবে। উল্লেখ্য, কিছু সময় আগে ঝাড়খণ্ডের রাঁচির মাণ্ডরে ডাইনি অপবাদে পাঁচ মহিলাকে পিটিয়ে খুন করা হয়। অন্য রাজ্যগুলির প্রত্যন্ত গ্রামে মাঝেমধ্যেই ডাইনি অপবাদে অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে।

অসমে পাশ হওয়া আইনে ডাইনি অপবাদে অত্যাচার চালানো, একঘরে করা বা হত্যার ঘটনায় তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজার সুপারিশ থাকছে। সেই সঙ্গে উক্ত আইনে হাতুড়ে চিকিৎসকদের বেআইনি অনুশীলন ও সালিশি সভা বন্ধেরও কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ডাইনি অপবাদে একঘরে হওয়া, জখম হওয়া, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মহিলা বা পুরুষকে ক্ষতিপূরণ এবং ডাইনি-শিকারের বলি হওয়া পরিবারের অনাথ শিশুদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করা হবে।

এই আইনটি লাগু করার পেছনে দিবজ্যোতি সাঁইকিয়ার অবদান অনেক।  অসমে গত ৭ বছরে ডাইনি অপবাদে প্রায় ৭০ জনের বেশি খুন করা হয়েছে। এই ঘটনা বেশি ঘটেছে শোণিতপুর, লখিমপুর, মাজুলি, বড়ো ও সাঁওতাল অধ্যূষিত জেলাগুলিতে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে দেখেছে, অনেক ঘটনার পিছনেই রয়েছে জমি বিবাদ বা ব্যক্তিগত শত্রুতা। রাজ্য পুলিশ ডাইনি হত্যা রোধে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছিল। পাশাপাশি বীরুবালা রাভা ও দিব্যজ্যোতি সাঁইকিয়া ডাইনি হত্যা রোধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু, তার পরও এই সব ঘটনা আটকানো যাচ্ছিল না।

দিব্যজ্যোতিবাবু জানান, প্রায় ছ’বছর ধরে তাঁরা ডাইনি হত্যা রোধে কড়া আইনের জন্য সুপারিশ করছিলেন। অসম সরকার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া বিল তৈরি করে। মন্ত্রিসভা তাতে সম্মতি দেয়। তিনি বলেন, ‘‘ছ’বছরের চেষ্টায় বিল পাশ হওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু, ওঝাদের রমরমা বন্ধ করতে কোনও দল মুখ খুলল না। এটা খুবই মর্মান্তিক। অসম সরকারের হিসেবে, ২০১১ সালে ২৯ জন, ২০১২ সালে ১১ জন, ২০১৩ সালে ১৬ জন ও ২০১৪ সালে ডাইনি অপবাদে ৯ জনকে খুন করা হয়। ২০১৫ সালে বিধানসভায় এআইইউডিএফ বিধায়ক আবদুল রহিম খান, অপরাধীদের জরিমানার টাকা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। অগপ বিধায়ক কেশব মহন্ত বলেন, ‘‘শাস্তি দিয়ে ডাইনি-হত্যার রাশ টানা যাবে না। স্কুলে স্কুলে অন্ধবিশ্বাস রোধে সচেতনতা শিবির ও এই বিষয়টি পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’’

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, " নারী সুরক্ষা ও নির্যাতন প্রতিরোধ বিল-২০১১" নামক এই বিলের ৪ নং সেকশনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কোনো মহিলাকে ডাইনি ঘোষণা করে গ্রামের অন্য সদস্যদের উস্কালে বা ডাইনি ঘোষিত মহিলার বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করে নির্যাতন ও  শাস্তি দিলে অপরাধীদের সর্ব্বোচ্চ সাজা সাত বছরের জেল সঙ্গে কুড়ি হাজার টাকা জড়িমানা। এছাড়া ঝাড়খণ্ড সরকার পাশ করিয়েছে " ডাইনি প্রতিরোধ আইন- ২০১১", ছত্তিশগড় সরকার এনেছে " তোনাহি প্রদদ্ম নিভারণ আইন- ২০০৫ ", বিহার সরকার এনেছে " ডাইনি প্রতিরোধ আইন- ১৯৯৯"। " অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতি " র প্রতিষ্ঠাতা নরেন্দ্র দাভলকর এর বিশেষ উদ্যোগে " The Maharashtra Prevention and Eradication of Human Sacrifice and other Inhuman, Evil and Aghori Practices and Black Magic Act 2013 " চালু হয়েছে। তাছাড়া " The Drugs and Magic Remedies ( Objectionable Advertisement) Act 1954", এবং 

" The Drugs and Cosmetics Act 1940 ", এর মতন বেশ কিছু কঠোর আইনও এই দেশে রয়েছে। 

ভারতে এতোগুলো আইন থাকা সত্বেও ডাইনি বলে দেগে দিয়ে হত্যার ঘটনা প্রায়শই খবরের কাগজে স্থান পায়। অন্যান্য রাজ্যে আইন রয়েছে অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে না আছে ডাইনি সন্দেহে অত্যাচার কিংবা হত্যার কোনো তথ্য আর না কঠোর আইন প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ। 

প্রসঙ্গত জানাই, গত ১৪ ই আগষ্ট ২০১৮ তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কে একটা RTI করেন ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি র পুরুলিয়া শাখা সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি মধুসূদন মাহাতো। তথ্য জানার অধিকার আইন ২০০৫ এর মাধ্যমে মধুসূদন মাহাতো, সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডাইনি সন্দেহে কতজন মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে।

৩০ আগষ্ট ২০১৮ তে স্টেট ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো থেকে উত্তর আসে যা সত্যিই অবাক করার মতন। সরকারের কাছে নাকি কোনো তথ্যই নেই! 

বাহঃ চমৎকার। 

কয়েকজন মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনষ্ক ব্যক্তিরা মহারাষ্ট্রের ধাঁচে এই পশ্চিমবঙ্গে একটি কঠোর আইন প্রণয়ণের দাবীতে আইনের খসড়া জমা দিয়েছেন State Law Commission এর দপ্তরে। আইনটির নাম " The West Bengal Prevention of Superstition and Black Magic Practices Bill 2016। " আপাতত এই আইনটি লাল ফিঁতের ফাঁসে আটকে রয়েছে সরকারের উদাসিনতার কারনে।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929